লোকাল বিজনেস প্রোমোশন করার উপায়

লোকাল বিজনেস প্রোমোশন

লোকাল বিজনেস, যা সাধারণত একটি নির্দিষ্ট এলাকায় স্থানীয় জনগণের জন্য পণ্য বা পরিষেবা সরবরাহ করে, বর্তমান বৈশ্বিক মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে অনেক বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। যদিও ব্যবসায়িক সংকট খুবই দুঃখজনক, সঠিক উপায়ে পরিকল্পনা করে এ থেকে উত্তরণ সম্ভব। করোনাভাইরাসের কারণে বিভিন্ন দেশ ও শহরে লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ফলে অনেকে তাদের প্রতিদিনের আয় হারিয়েছে। তবে বুদ্ধিমানেরা চ্যালেঞ্জকে সুযোগে পরিণত করে। তাদের মতো উদ্যোক্তাদের জন্য লোকাল বিজনেস নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে।

লোকাল বিজনেস কি?

লোকাল বিজনেস বলতে সাধারণত সেই ব্যবসাগুলোকে বোঝায় যেগুলো একটি নির্দিষ্ট এলাকার মানুষের জন্য কাজ করে। এই ধরনের ব্যবসায়ীদের ক্রেতা হয় স্থানীয় জনগণ। এর মধ্যে থাকতে পারে ছোট মুদি দোকান, স্থানীয় রেস্টুরেন্ট, বুটিক, ছোটখাট খুচরা বিক্রেতা বা অন্য কোনো ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তা যারা নির্দিষ্ট অঞ্চলের ভোক্তাদের জন্য পণ্য বা সেবা সরবরাহ করে। এই ব্যবসাগুলো সাধারণত কোনো বড় কোম্পানি বা শপিং মলের অংশ হয় না, তবে এরা স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

লোকাল বিজনেসে পরিবর্তন:

করোনাভাইরাসের প্রভাবে লোকাল বিজনেসগুলোর কার্যক্রমেও বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। প্রথাগত অফলাইন বিপণন পদ্ধতিগুলো আপাতত আর তেমন কার্যকর নয়। সামাজিক দূরত্ব ও অন্যান্য নিরাপত্তা নির্দেশিকা মেনে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য অনেক ব্যবসায়ী তাদের কার্যক্রম অনলাইনে স্থানান্তর করেছেন। বিশেষ করে অনলাইন শপিং এবং ডেলিভারি সার্ভিসের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, ব্যবসাগুলোকে তাদের প্রথাগত কার্যক্রম থেকে বেরিয়ে এসে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ করতে হচ্ছে।

লোকাল বিজনেস প্রোমোট করার উপায়:

লোকাল বিজনেসের সাফল্যের জন্য সঠিক মার্কেটিং এবং প্রোমোশন অপরিহার্য। এখানে কিছু কার্যকর উপায় আলোচনা করা হলো যার মাধ্যমে আপনি আপনার লোকাল বিজনেসকে প্রোমোট করতে পারেন:

বিজনেস ওয়েবসাইট তৈরি করুন: আপনার ব্যবসার জন্য একটি পেশাদার ওয়েবসাইট তৈরি করা আজকাল অপরিহার্য। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে স্থানীয় ক্রেতারা সহজেই আপনার পণ্য বা সেবার সাথে পরিচিত হতে পারে। এছাড়া, আপনার ব্যবসার বিস্তারিত তথ্য, ঠিকানা, যোগাযোগের নম্বর এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য ওয়েবসাইটে থাকা উচিত।

স্টোর ম্যাপ ও নেভিগেশন: আপনার ওয়েবসাইটে স্টোরের সঠিক অবস্থান যুক্ত করুন, যাতে ক্রেতারা সহজে আপনার দোকান খুঁজে পেতে পারে। একটি নেভিগেশন ম্যাপ ক্রেতাদের সরাসরি আপনার দোকানে নিয়ে আসতে সহায়ক হয়।

প্রোডাক্ট লিস্টিং ও আপডেট: ওয়েবসাইটে আপনার প্রোডাক্টের তালিকা এবং সেগুলোর আপডেট রাখুন। ক্রেতারা যখন অনলাইনে অনুসন্ধান করবে, তখন তাদের পছন্দের পণ্য খুঁজে পাওয়ার সুবিধা থাকবে। প্রোডাক্ট লিস্টিং নিয়মিত আপডেট রাখলে ক্রেতাদের আগ্রহও বাড়বে।

সোশ্যাল মিডিয়া এডভারটাইজিং: বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। আপনি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, ইউটিউব ইত্যাদির মাধ্যমে আপনার লোকাল বিজনেসের প্রচার চালাতে পারেন। ফেসবুকে বিজ্ঞাপন চালানোর মাধ্যমে আপনি টার্গেট করা ক্রেতাদের কাছে সহজেই পৌঁছাতে পারবেন।

অনলাইন রিভিউ এবং ফিডব্যাক: ক্রেতারা প্রায়ই অনলাইনে কোনো পণ্য কিনতে যাওয়ার আগে তাদের রিভিউ দেখে। তাই আপনার ব্যবসার রিভিউ ভালো রাখতে ক্রেতাদের কাছ থেকে ফিডব্যাক নিন এবং তাদের পরামর্শগুলোকে গুরুত্ব দিন।

ই-মেইল মার্কেটিং: ই-মেইল মার্কেটিংও একটি কার্যকরী পদ্ধতি যা ক্রেতাদের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করে। নিয়মিত ই-মেইল নিউজলেটার পাঠানোর মাধ্যমে আপনি আপনার নতুন পণ্য, সেবা, অফার ইত্যাদি সম্পর্কে ক্রেতাদের অবহিত করতে পারেন। এটি ক্রেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতেও সাহায্য করে।

লোকাল ইভেন্ট ও ক্যাম্পেইন: আপনার এলাকা বা সম্প্রদায়ের সাথে মিলে ক্যাম্পেইন বা ইভেন্ট আয়োজন করতে পারেন। এটি কেবলমাত্র আপনার ব্যবসার প্রচারেই সাহায্য করবে না, বরং স্থানীয় লোকজনের সাথে সম্পর্ক গড়তে ও ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতেও সহায়ক হবে।

গুগল মাই বিজনেস: গুগল মাই বিজনেস প্ল্যাটফর্মে আপনার ব্যবসার নিবন্ধন করুন। এতে করে আপনার ব্যবসা সহজেই স্থানীয়ভাবে সার্চ রেজাল্টে উঠে আসবে এবং ক্রেতারা আপনার দোকানের ঠিকানা, ফোন নম্বর, সময়সূচী ইত্যাদি দ্রুত খুঁজে পাবে।

অনলাইন এবং অফলাইন বিপণনের সমন্বয়:

লোকাল বিজনেস সফল করার জন্য অনলাইন এবং অফলাইন বিপণনের সমন্বয় প্রয়োজন। অফলাইন পদ্ধতিতে লোকাল ইভেন্ট, লোকাল পত্রিকা বিজ্ঞাপন, পোস্টার, লিফলেট ইত্যাদি ব্যবহৃত হতে পারে। কিন্তু বর্তমানে অনলাইন মার্কেটিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, কারণ সবাই এখন ঘরে বসে মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার করে বিভিন্ন তথ্য খোঁজে। তাই অনলাইন প্রোমোশন আপনার ব্যবসাকে অনেক দ্রুত প্রসারিত করতে সক্ষম।

বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে আপনার নিজ এলাকার বিজনেস শুরু করা এবং তা সঠিকভাবে প্রোমোট করা একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে, তবে এটি সঠিক উপায়ে করা সম্ভব হলে ব্যবসার প্রসারতা বাড়বে। আপনার লোকাল বিজনেসকে সঠিকভাবে প্রচার করতে হলে অনলাইন এবং অফলাইন দুই ধরনের মার্কেটিং কৌশলকেই কাজে লাগাতে হবে।


Previous Post Next Post