ই-মেইল মার্কেটিং কি? ইমেইল মার্কেটিং কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ই-মেইল মার্কেটিং


ই-মেইল মার্কেটিং কি?

ই-মেইল মার্কেটিং হচ্ছে এক ধরনের ডিজিটাল মার্কেটিং কৌশল, যার মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে সরাসরি মেসেজ পাঠিয়ে ব্যবসায়িক যোগাযোগ স্থাপন করা হয়। ই-মেইলের মাধ্যমে পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন, প্রমোশনাল অফার, এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এটি এমন একটি কৌশল, যা একজন ব্যবসায়ীকে তার টার্গেটেড গ্রাহকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের সুযোগ দেয়। একটি ই-মেইল পাঠানোর মাধ্যমে আপনি আপনার ব্র্যান্ড, পণ্য, বা সেবাকে আরও কার্যকরভাবে বাজারজাত করতে পারেন।

ই-মেইল মার্কেটিং কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ই-মেইল মার্কেটিং এর গুরুত্ব নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় এর সরাসরি গ্রাহকসংযোগের ক্ষমতা। অন্যান্য ডিজিটাল মার্কেটিং চ্যানেলের মাধ্যমে আপনি সাধারণত গ্রাহকদের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন, কিন্তু ই-মেইল মার্কেটিং সরাসরি তাদের ইনবক্সে পৌঁছানোর সুযোগ দেয়, যা একটি অত্যন্ত কার্যকর এবং ব্যক্তিগত মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এটি এমন একটি কৌশল যা অন্যান্য মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজির তুলনায় কম খরচে বেশি রিটার্ন প্রদান করে।

ই-মেইল মার্কেটিং এর গুরুত্বের কারণসমূহ:

১. সর্বাধিক ROI প্রদানকারী কৌশল:

ই-মেইল মার্কেটিংকে সবচেয়ে কার্যকরী ROI (Return on Investment) প্রদানকারী কৌশল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গবেষণা অনুসারে, ই-মেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনি প্রতি ১ ডলার ইনভেস্টমেন্টের বিপরীতে ৩৮ ডলার রিটার্ন পেতে পারেন। এটি স্পষ্টভাবে ই-মেইল মার্কেটিংকে অন্যান্য মার্কেটিং কৌশলগুলোর তুলনায় অনেক বেশি লাভজনক করে তোলে।

২. বৃহৎ সংখ্যক গ্রাহকসংযোগ:

ই-মেইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা লক্ষাধিক, এমনকি ফেসবুক এবং টুইটারের মতো বড় সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহারকারীর সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৯ সালের এক পরিসংখ্যান অনুসারে, ২.৯ বিলিয়ন ই-মেইল ব্যবহারকারী ছিল, যা ফেসবুক এবং টুইটারের সম্মিলিত ব্যবহারকারীর চেয়ে বেশি। অতএব, ই-মেইলের মাধ্যমে আপনি আরো বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেন, যা আপনাকে আরও বেশি বিক্রয় বৃদ্ধির সুযোগ করে দেয়।

৩. মোবাইল ফ্রেন্ডলি ই-মেইল মার্কেটিং:

বর্তমান সময়ে ই-মেইল মার্কেটিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এটি মোবাইল ডিভাইসের জন্য সহজে ব্যবহারযোগ্য। অধিকাংশ মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করে ই-মেইল চেক করে। এর ফলে ই-মেইল মার্কেটিংয়ের পরিধি আরও বেড়েছে এবং আপনি সহজেই লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেন, বিশেষত যাদের স্মার্টফোনের মাধ্যমে ই-মেইল এক্সেস করার সুবিধা রয়েছে।

ই-মেইল মার্কেটিং এর ধরণ:

১. ওয়েলকাম ই-মেইল:

যখন কোন ব্যবহারকারী একটি নতুন ওয়েবসাইটে সাইন আপ করে, তখন তাদের পাঠানো হয় একটি ওয়েলকাম ই-মেইল। এটি একটি কৌশল যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের প্রথম থেকেই আপনার ব্র্যান্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করা যায় এবং তাদের কাছ থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আশা করা যায়।

২. এবান্ডন্ট কার্ট ই-মেইল:

ই-কমার্স ওয়েবসাইটগুলোতে এই ধরনের ই-মেইল ব্যবহার করা হয় যখন একজন ব্যবহারকারী তাদের শপিং কার্টে পণ্য রেখে কেনাকাটা শেষ না করেই ওয়েবসাইট ছেড়ে যায়। এই ই-মেইল তাদের পণ্য কেনাকাটা শেষ করার জন্য স্মরণ করিয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, এ ধরনের ই-মেইল কনভার্সন রেট প্রায় ৪.৫৬% পর্যন্ত বাড়াতে পারে।

৩. ট্রানজেকশনাল ই-মেইল:

এই ধরনের ই-মেইল সাধারণত ক্রয় রসিদ, পাসওয়ার্ড রিসেট, এবং গ্রাহক সহায়তার মতো কার্যক্রমের জন্য ব্যবহার করা হয়। এগুলো ব্যবহারকারীকে তাদের কার্যক্রমের উপর নির্ভরযোগ্য আপডেট প্রদান করে এবং বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ায়।

৪. রিওয়ার্ড ই-মেইল:

বিশ্বস্ত গ্রাহকদের বিশেষ অফার এবং পুরস্কার প্রদান করতে রিওয়ার্ড ই-মেইল পাঠানো হয়। এটি গ্রাহকদের পুনরায় আপনার ওয়েবসাইটে ফিরে আসতে উৎসাহিত করে এবং বিক্রয় বৃদ্ধি করে।

৫. ফ্ল্যাশ সেল ই-মেইল:

এটি এমন ই-মেইল যা সাধারণত ওয়েবসাইটে ট্রাফিক জেনারেট করার জন্য এবং দ্রুত বিক্রয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি সীমিত সময়ের জন্য বিশেষ অফার প্রদান করে, যা অনেক গ্রাহককে আকৃষ্ট করে। তবে অতিরিক্ত অফার সংযুক্ত থাকায়, কখনও কখনও এই ই-মেইলগুলো স্প্যাম হিসেবে ধরা পড়ে।

ই-মেইল মার্কেটিং এর সুবিধা:

১. ব্যয় সাশ্রয়ী:

ই-মেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আপনার ব্যবসার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয় না। এটি অন্যান্য প্রচলিত মার্কেটিং কৌশলের তুলনায় অনেক কম খরচে করা যায় এবং আপনি উচ্চ ROI অর্জন করতে পারেন। এটি বিশেষত ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য খুবই কার্যকরী।

২. সরাসরি গ্রাহকসংযোগ:

ই-মেইল মার্কেটিং আপনাকে সরাসরি গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দেয়। আপনি সহজেই আপনার গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় তথ্য এবং অফার পাঠাতে পারেন এবং তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করতে পারেন।

৩. ব্যক্তিগতকরণ এবং অটোমেশন:

ই-মেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আপনি ব্যক্তিগতকরণ কৌশল ব্যবহার করে প্রতিটি গ্রাহককে আলাদা করে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ই-মেইল পাঠাতে পারেন। অটোমেশন ব্যবহারের ফলে, আপনার সময় বাঁচবে এবং আপনি সহজেই আপনার বিপণন প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে পারবেন।

৪. পরিমাপযোগ্য ফলাফল:

ই-মেইল মার্কেটিংয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি পরিমাপযোগ্য। আপনি কতজন গ্রাহক আপনার ই-মেইল খুলেছে, কতজন ক্লিক করেছে, কতজন ক্রয় করেছে — এসব পরিসংখ্যান আপনি খুব সহজেই জানতে পারেন এবং আপনার কৌশলকে উন্নত করতে পারেন।

ই-মেইল মার্কেটিং এর ইতিহাস:

ই-মেইল মার্কেটিংয়ের শুরু হয়েছিল ১৯৭৮ সালে, যখন মার্কিন মার্কেটার গ্যারি থিউর্ক ARPANET এর মাধ্যমে ৪০০ সম্ভাব্য গ্রাহকের কাছে একটি ই-মেইল পাঠিয়েছিলেন। এই ই-মেইল ক্যাম্পেইনটি সফল হয়েছিল এবং প্রায় ১৩ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য বিক্রি হয়েছিল। সেই সময় থেকে ই-মেইল মার্কেটিং দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং এটি আধুনিক ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের একটি প্রধান মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ই-মেইল মার্কেটিং হচ্ছে এমন একটি কার্যকরী মার্কেটিং কৌশল, যা খুব কম খরচে আপনার ব্যবসাকে আরও সফল করতে সাহায্য করতে পারে। এটি সরাসরি গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর একটি মাধ্যম এবং তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করতে সাহায্য করে। আধুনিক যুগে, ই-মেইল মার্কেটিংকে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়, বিশেষত যখন এটি আপনার ব্যবসার জন্য উচ্চ ROI প্রদান করে।


Previous Post Next Post